সেবকেশ্বরী কালীর মন্দির অবস্থান করছে পাহাড়ের কোলে, জানুন দেবীর মহিমা সমন্ধে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : সারা পাহাড় যখন ঘুমোয় তখন জেগে থাকেন সেবকেশ্বরী মা। তিনি পাহাড়ের প্রহরী, ১০৭টি সিঁড়ি পেরিয়ে পাহাড়ের কোলে অবস্থান করছে সেবকেশ্বরী কালী মন্দির। দেবীর মহিমা অপার, বিপদ ধারেকাছে আসবে না দুর্গম পথে মাকে স্মরণ করলে। পাহাড়ে ধস নেমেছে বহুবার। একটুও আঁচ অব্দি পড়েনি মন্দিরের দেওয়ালে। সেবকেশ্বরী মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনের মাহাত্ম্য জানেন? মায়ের মন্দিরটি কোথায়? গায়ে কাঁটা দেবে সেবক পাহাড়ের কোলে এই কালী মায়ের সম্পর্কে ৪ টি অজানা অলৌকিক তথ্য জানলে।

ভক্তদের বিশ্বাস, গোটা পাহাড়-জঙ্গল যখন ঘুমোয় তখন একমাত্র জেগে থাকেন সেবকেশ্বরী মা। রহস্য মাখা এই পাহাড়ের একাকী মা যেন অতন্দ্র প্রহরী।‌ কার্তিকী অমাবস্যার রাতে পাহাড়ের গায়ে ১০৭টি সিঁড়ি পেরিয়ে পুজো দিতে ভক্তরা আসেন। নিঝুম রাতে সেবক পাহাড়ে যেন জেগে উঠেন স্বয়ং মা। তার কাছে অন্তর থেকে প্রার্থনা করলে ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করেন।

জানেন কীসে সন্তুষ্ট হন মা সেবকেশ্বরী? শিলিগুড়ি শহর ছাড়ালেই সেবক পাহাড়। শিলিগুড়ির থেকে কালিম্পঙের দিকে যে রাস্তা গিয়েছে, সেই পথ ধরে এসে এই মন্দির। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি, তরাই, ডুয়ার্স তো বটেই, সিকিম, বিহার, ভুটান, নেপাল থেকেও ভক্তরা আসেন ফি বছর। এই মন্দিরে বারবার ঘটেছে চলেছে কোন অলৌকিক ঘটনা ?

একদিকে পাহাড়, আরেকদিকে নীলচে সবুজ তিস্তা। গভীর খাঁদ লাগোয়া রাস্তার আঁক-বাঁক অসম্ভব সরু। যেতে ভয় লাগে বটে। তবে এই রাস্তায় চলাচলের পথে বিপদ থেকে রক্ষা করতে মা সেবকেশ্বরী তো রয়েছেন। সেবক পাহাড়ে বারবার ধস নামে। কিন্তু কোনওদিনও আলগা হয় না মন্দিরের এক টুকরো পাথর। মায়ের ক্ষমতা যেন সবারই জানা। তিনিই পারেন আমাদের বাঁচাতে।
তাই মন্দিরের দেওয়ালে একটা আঁচ অব্দি পড়েনি।

কবে থেকে পাহাড়ের কোলে দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছিল? সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট উঁচু মন্দিরে রয়েছে পঞ্চমুন্ডির আসন। সেই আসন স্বপ্নে দেখতে পায় নীরেন্দ্রনাথ সান্যাল নামে এক ব্যক্তি। বহুদিন আগে তিনি স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেই তিনি লক্ষ্য করেন সত্যি বেদি তৈরি করা আছে। একটি ত্রিশূল এবং জবাফুল। তাছাড়া একটা বেলপাতা পড়ে রয়েছে। তা দেখবার পর মাকে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন ওই রাস্তা দিয়ে শুধু সেনাবাহিনীর গাড়ি যাতায়াত করতো। সেনা জওয়ানরা রাত্রির সীমান্ত পাহারা দিতে যাওয়ার সময় মাকে প্রণাম করে যেতেন। অনেক পরে মায়ের মাটির মূর্তি বসানো হয়। পাহাড়ের গা কেটে তৈরি করা হয়েছে এই মায়ের মন্দির। দেবীর আরাধনা হয় সেবক পাহাড়ের উপর । মা নাকি কাউকেই ফেরান না ভক্তিভরে ডাকলে।

মায়ের প্রিয় ভোগ কী জানেন? এমনতি রোজ সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, পায়েস, লুচি, দই, মিষ্টি মাকে নিবেদন করা হয়। বোয়াল মাছ দেবীর ভীষণ প্রিয়। কালীপুজোয় রাতভর চলে দেবীর আরাধনা। এরপর সকাল থেকে শুরু হয় খিচুড়ি ভোগ নিবেদন। দেড়শো কড়াই খিচুড়ি হয় কালীপুজোর রাতে। মন্দিরের পুজোয় চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এখানে নেই কোনও বৈভবের ছোঁয়া। ভক্তদের শ্রদ্ধা, আবেগ মিশে রয়েছে নিতান্তই সাদামাটা এই মন্দিরের সঙ্গে।

এখানে অঞ্জলি হয় কালীপুজোয় গভীর রাতে । হিমের রাতে চারদিকে ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ। তিস্তার গর্জন ভেসে আসতে থাকে পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণের শব্দ পেরিয়ে। পাহাড়ের প্রত্যেকটা কোনায় স্বয়ং মায়ের বাস। সকলেরই বিশ্বাস, জাগ্রত সেবকেশ্বরী ভক্তদের মনোষ্কামনা পূর্ণ করবেনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *