তৎপরতায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি বিগত ১৫ বছরেও ! “ফ্ল্যাগ ম্যান” তেরঙা কুড়িয়ে বেড়ান রাস্তা থেকেই

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : উৎসব আসে উৎসব যায়। প্রজাতন্ত্র দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবস দেশের সব মহল্লা, পাড়া, অলিগলি দেশপ্রেম আর উৎসবের জৌলুসে ঢেকে যায়। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই জায়গায় জায়গায় চলে দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন। লম্বা দড়িতে সারিবদ্ধভাবে ঝোলানো থাকে তেরঙা। স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা। এই পতাকা মাথা উঁচু করে আকাশে উড়বে বলেই তো এত বলিদান দিয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। কিন্তু সূর্য ডুবে গেলেই সব শেষ! যাবতীয় সব দেশপ্রেম টুপ করে যেন অস্ত যায়। তখন আর সেই সব পতাকার কী হল, খবর রাখেন না কেউই।

সারিবদ্ধভাবে থাকা তেরঙার ঠাই হয় কখনও রাস্তার ধারে, কখনও নর্দমায়। পড়ে থাকে স্বাধীনতার প্রতীক। বেশিরভাগ মানুষই সেদিকে ফিরেও তাকান না। কিন্তু কেউ কেউ তো থাকেন এই ভিড়ের মধ্যেও ব্যতিক্রম। এদিক সেদিক পড়ে থাকা তেরঙাদের রাস্তা থেকে তুলে মাথায় ছুঁয়ে সযত্নে আগলে রাখেন নিজের কাছে। এরকমই একজন বালি নিশ্চিন্দার বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন সরকার। এলাকার লোকজনের কাছে তিনি পরিচিত মনু নামেই।

প্রজাতন্ত্র দিবস , স্বাধীনতা দিবসের মতো বিশেষ বিশেষ দিনগুলোর শেষে ব্যবহৃত দেশের জাতীয় পতাকাগুলো যখন রাস্তায় লুটোপুটি খায় তা খুঁজে খুঁজে বের করাই হল প্রিয়রঞ্জনের কাজ। তারপর সেগুলো ভরে রাখেন নিজের ঘরের একটি বাক্সে। বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে এভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অনেকে বলেন কাগজ কুড়ানি, কেউ অবজ্ঞা করেন কেউ টিপ্পনিও কাটেন। কিন্তু সেসবের দিকে ভ্রূক্ষেপ থাকে না মনুর। কিন্তু কেন এমন করেন তিনি? কারণ, তাঁর কথায়, জাতীয় পতাকাও তো মা। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন মনু। মা আভাদেবী অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন তাঁকে। তিনিই শিখিয়েছিলেন, মনুর আরেক মা আছে। ভারত মাতাকে নিজের মায়ের মতোই দেখতে হবে।

প্রিয়রঞ্জন সরকার ছোট থেকেই শারীরিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম। তিনি ঠিক করে কথাও বলতে পারেন না। তাতেও তাঁকে দমিয়ে রাখা যায়নি। পথে ঘাটে নর্দমায় দেশের জাতীয় পতাকা পড়ে থাকতে দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার সম্মান বাঁচাতে। রাজ্য সেচ দফতরের অস্থায়ী কর্মী তিনি। হাওড়ার সকলের কাছে প্রিয়রঞ্জন বাবু পরিচিত ‘ফ্ল্যাগ ম্যান’ নামে। পতাকা কুড়ানো শেষে প্রিয়রঞ্জন বাবু বলছিলেন, “২৩ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি বা ১৫ অগাস্ট, দেশ জুড়ে মহা সামারোহে উদযাপন হয় এই দিনগুলি। জাতীয় পতাকায় সাজানো হয় চারদিকে। কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলির পরের দিন কি মানুষ মনে রাখে গলি রাজপথে লাগানো তেরঙা কাগজের টুকরোগুলির কথা! মনে রাখে দেশের সম্মানের কথা? এই বিশেষ দিনগুলির পরেরদিন সকাল সকাল ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যায়। নিজের খারাপ লাগে এভাবে দেশের পতাকাকে মাটিতে পড়ে থাকতে। যেখানেই জাতীয় পতাকা দেখতে পাই তুলে নিজের ব্যাগে তুলে ফেলি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *