বৈজনাথ আজও ঘেরা ঘোড় রহস্যে! এখানেই একমাত্র নিষিদ্ধ রাবণের কুশপুতুল পোড়ানো, জেনে নিন তার প্রকৃত কারণ

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : সারা ভারতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে দশেরা এক বিরাট পবিত্র উৎসব। দশেরা উৎসবের প্রধান ঐতিহ্যই হল রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ করা। এই কুশপুত্তলিকা দাহ হল সমস্ত মন্দের উপর ভালোর জয়ের প্রতীক। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি কোণে দশেরা উৎসব পালিত হয়। অথচ জানলে অবাক হবেন, একমাত্র হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শহরে স্থানীয়রা রাবণের কুশপুতুল দাহ করেন না! আর পিছনে রয়েছে সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কারণ।

ধর্মীয় কারণ : শিবভক্তরা জানেন হিমাচলের বৈজনাথ শহর হল মহাদেবের মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। আর রাবণ ছিল শিবের অন্যতম বড় উপাসক। শিবের প্রতি তাঁর ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছিল প্রশ্নাতীত। শিবের পূজা না করে তিনি কোনওদিন খাদ্যগ্রহণ করতেন না। এমনকী শিবকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে নিজের মস্তকও আগুনে সমপর্ণ করেছিলেন তিনি। মহাদেব তাঁর উপাসনায় সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে একটি শিবলিঙ্গ লঙ্কায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। সব দেবতারা রাবণের এই কর্মকাণ্ডে ভয় পান ও তাঁদের মায়ায় সেই শিবলিঙ্গ স্থাপিত হয় বৈজনাথে। ঠিক এই কারণেই বৈজনাথের স্থানীয় বাসিন্দারা কোনওভাবেই এহেন মহান শিবভক্তের কুশপুতুল পোড়াতে চান না। বরং স্থানীয়রা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে রাবণের কুশপুতুল পোড়ালে মহাদেব ক্রুদ্ধ হবেন! স্থানীয়দের এই বিশ্বাস এতখানিই প্রবল যে তাঁরা শুধু রাবণের কুশপুতুল পোড়ায় না এমন নয়, তার সঙ্গে রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ এবং সন্তান মেঘনাদের কুশপুতুলও পোড়াতে চান না।

মর্মান্তিক ঘটনা : স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কুশপুত্তলিকা দাহ নিয়ে আরও একটি বিশেষ একটি কাহিনি প্রচলিত আছে। কিছু বছর আগে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা রাবণের কুশপুত্তলিকা দাহ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। দেখা যায় পরবর্তী দশেরা আসার আগেই তারা অদ্ভুতভাবে মারা যান! ওই ঘটনার পর থেকে মানুষ কিংবদন্তিতেই বিশ্বাস রাখেন ও আর কোনওদিন দশেরা পালনের চেষ্টা করেননি।

বৈজনাথ : হিমাচল প্রদেশের বৈজনাথ অত্যন্ত ছোট্ট একটি শহর। সেখানেই রয়েছে মহাদেবের বিখ্যাত উপাসনাস্থল বৈজনাথ ধাম। সারা দেশের মানুষের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র এই মন্দির। মহাদেবের প্রতি ভক্তির প্রদর্শনের জন্য দেশের প্রতিটি কোণ থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন এই মন্দিরে। তবে শুধু মহাদেব নয়, সেখানে রয়েছে ভগবান গণেশ এবং বিষ্ণুর মূর্তিও। এমনকী মন্দিরের গাত্রে মহাদেব এবং বিষ্ণু সম্পর্কিত নানা পৌরাণিক কাহিনীও খোদাই করা রয়েছে।

মনে করা হয় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। অর্থাৎ কাতুরি রাজবংশের সময় থেকেই এই মন্দির রয়েছে বৈজনাথে। কাংড়া উপত্যকায় যে কটি মন্দির রয়েছে তাদের মধ্যে মহাদেবের প্রতি উৎসর্গীকৃত এই উপাসনাস্থল সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

বৈজনাথে না হলেও হিমাচল প্রদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় কিন্তু দশেরা উৎসব পালন হয়। মন্দিরের নিয়ম মেনেই পালিত হয় আচার-অনুষ্ঠান। দশেরা সেখানে অশুভশক্তিকে ত্যাগ করে শুভশক্তি গ্রহণ করে অন্তরের আলোকে জাগ্রত করার উৎসব। সেখানে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তরা যান ও পূজা দেন। প্রার্থনা করেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *