রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষরা থাকতেন কুশা গ্রামে , বহু অজানা তথ্য উঠে এলো রবীন্দ্র গবেষকের কথায়

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : আজ রবি-পার্বণ, আজ চির নূতনেরে ডাক দেওয়ার সেই দিন, আজ ২৫ বৈশাখ। গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মতো আজ দিকে দিকে রবীন্দ্রনাথের গানে কথায় সুরে তাঁকেই স্মরণ করবে বাঙালি। সে দেশে হোক বা বিদেশে। এই রবিঠাকুরেরই পূর্ব পুরুষের বাস ছিল পূর্ব বর্ধমানের কুশা গ্রামে। অনেকে বলেন কুশা গ্রাম। সেই সময় তাঁদের পদবি ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমানের ২ নম্বর ব্লকের হাটগোবিন্দপুর গ্রামপঞ্চায়েতের কুশা গ্রাম। কুশা গ্রামে ব্রাহ্মণ আচার অনুষ্ঠানে খুশি হয়ে তৎকালীন মহারাজ ক্ষিতি শূর কুশা গ্রামকে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষ দীননাথকে। কুশা গ্রামের অধিকারী হওয়ায় ক্রমে দীননাথ বন্দোপাধ্যায়কে কুশারি উপাধিতে ডাকা শুরু হয় বলে জানান বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মানস বসু।

মানসবাবুর কথায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষরা কুশা গ্রামেই ছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁরা যশোর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। কুশা গ্রামের অধিকারী হওয়ার জন্য তাঁদের কুশারি পদবিতে ডাকা হতো। তবে যেহেতু তাঁরা পুজোআর্চা ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হন, তাই তাঁদের ঠাকুর বলে ডাকার চলও শুরু হয়। এরপর ব্রিটিশ রাজত্বে এই ঠাকুরই হয়ে ওঠে ‘টেগোর’। এই ঠাকুরকেই উপাধি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।

কুশা গ্রামের যে গ্রন্থাগার, সেখানে ফি বছর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হয়। গ্রামের শিশু, কিশোররা সেই অনুষ্ঠানে অংশও নেয়। তবে সবথেকে মজার বিষয় হল, এই কুশা গ্রামের সিংহভাগ মানুষই জানেন না, এটাই সেই গ্রাম যেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষরা ছিলেন। পরে যাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন।

গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা বিমল মণ্ডল ও তাঁর ভাই প্রাক্তন শিক্ষক নির্মল মণ্ডল দু’জনই জানান, তাঁরা তাঁদের পূর্ব পুরুষের কাছে শুনেছিলেন এই গ্রামেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন। আগে এতটা না বুঝলেও এখন বোঝেন তাঁদের গ্রামের মাটিতে কার শিকড় লুকিয়ে। বিমল মণ্ডল বা নির্মল মণ্ডলদের মতো কুশা গ্রামের আরও অনেকেরই দাবি, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কীভাবে এই কুশা গ্রাম জুড়ে আছে, ইতিহাসকে তুলে ধরে সরকার তা সামনে আনুক। তাঁরা চান গ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি বসানো হোক। একইসঙ্গে তাঁর বংশলতিকাও লিপিবদ্ধ করা হোক। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারে ইতিহাসকে।

বিমলবাবুরা জানান, এই কুশা গ্রামে এখন কোনেও ব্রাহ্মণ পরিবার নেই। নেই গ্রামে কোনও পুরনো মন্দির বা দেবস্থানও। স্বাভাবিকভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষরা ঠিক কোথায় ছিলেন তাও তাঁদের অজানা। এখন সরকারই পারে এ ব্যাপারকে আলোকপাত করতে। বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক মানস বসু জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানাতে সরকার এই গ্রামকে ঘিরে রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে পারে। সরকার পারে এই গ্রামের ইতিহাসকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দিতে। মানস বসুর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম দিকের পূর্ব পুরুষ হিসাবে যাঁরা কুশা গ্রামে বাস করতেন, পদবি ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে কুশারি হন। বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি। সে কারণেই অনেকে এ কথা মনেও রাখেননি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *