চার’শ বছরের প্রাচীন বাংলাদেশের শ্যাম সুন্দর মন্দির আজও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : আনুমানিক প্রায় চার’শ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হাল বাংলাদেশের শ্যামসুন্দর মন্দির। মন্দিরটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়ীয়া গ্রামে। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি মূলত গড়ে উঠেছে নবরত্ন মন্দির, দুর্গামন্দির ও শিব মন্দির এই তিনের সম্মিলনে।

স্থানীয়ভাবে একে ডাকা হয় সোনাবাড়ীয়া মঠ বা মঠবাড়ি নামেও। প্রায় ৬০ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত এই মন্দিরটি প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুরকম তথ্য পাওয়া যায় মন্দিরটির ইতিহাস নিয়ে। কেউ কেউ মনে করেন, ৪০০ বছরের বেশ কিছু পূর্বে বুদ্ধদেবের শিষ্যরা এই মন্দিরটি তৈরি করেন বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। এরপর প্রচারকগণ যখন ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে চলে যান তখন মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।

পরে তৎকালীন জমিদার সেটিকে ব্যবহার শুরু করেন ১৭৬৭ সাল থেকে। তারা ছিলেন মূলত জমিদার দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীর উত্তরসূরি। আবার কেউ মনে করেন, বাংলা ১২০৮ সালে রানী রাশমনি এই মঠ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। রাতের আঁধারে মাঠি ফুঁড়ে একাধিক শিব মূর্তি বের হয় সোনাবাড়িয়ার এক বেলগাছ তলায়। রানী রাশমনি এ মঠ মন্দির নির্মাণ করেন স্বপ্নে আদিষ্ঠ হয়ে স্নানের সময় ভাসমান পাথরের শিবমূর্তি উদ্ধার করে। এমনকি এও ধারণা করা হয়ে থাকে মন্দিরের আশেপাশে আরও প্রায় ৯টি মন্দির ছিল বলেও। জনশ্রুতি অনুসারে, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও পরিদর্শন করেছিলেন এ মন্দিরগুলো।

তিনতলা বিশিষ্ঠ পিরামিড অবয়বের এই মন্দিরটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট চওড়া। মন্দিরটি তৈরি করা হয় ছোট ছোট পাতলা ইট ও টেরাকোটা ফলক দিয়ে। এর সবখানেই শোভা পাচ্ছে নজরকাড়া কারুকাজ। এ মন্দিরটি অবস্থিত আম, কাঠাল, নারিকেল, মেহগনি, সেগুন ও দেবদারু গাছের বাগান দিয়ে ঘেরা ১৫ একর জমির ওপর। পূর্বে কষ্টি পাথরের তৈরি ১২টি শিবলিঙ্গ এই মন্দিরের পূর্ব দিকে স্থাপন করা ছিল। এছাড়াও দোতালায় ছিল স্বর্ণের তৈরি রাধ-কৃষ্ণ মূর্তি। ইট ও সুড়কি ব্যবহারের মাধ্যমে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের পাশে আরও দুটি মন্দির রয়েছে যেগুলো দুর্গা ও শিবের পূজা করার জন্য ব্যবহার করা হত। মন্দিরের সামনে একটি বড় পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাশ দিয়ে ঢুকতেই ছিল বড় তোরণ। তার ওপর ছিল নহবতখানা। প্রাচীন স্থাপত্যের এই নিদর্শনটি ক্রমশ জৌলুস হারিয়েছে কালের স্রোতে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মন্দিরটির এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। এদিকে স্থানীয় মানুষেরা শঙ্কিত ঐতিহাসিক মঠ মন্দিরটির এখনই সংস্কার করা না হলে এর জরাজীর্ণ অবশিষ্ট অংশটুকুও বিলীন হয়ে যাবে বলেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *