পরের বছরেই কি শুকিয়ে যাবে ভারতের বড় শহরগুলো?

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : ‘নীতি আয়োগে’র ওই প্রতিবেদনকে ঘিরে এ সপ্তাহে পার্লামেন্টেও সদস্যরা তীব্র উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।এই মুহুর্তে চেন্নাই শহরে তীব্র জলকষ্ট চলছে, মহারাষ্ট্র-কর্নাটক-তেলেঙ্গানা সহ ভারতের এক বিস্তীর্ণ অংশ খরার কবলে।তার ওপর মৌসুমি বৃষ্টিও ঢুকছে অনেক দেরি করে, পরিমাণেও তা অনেক কম।পুনের কাছে খড়কভাসলা জলাধার প্রায় শুকিয়ে গেছেকিন্তু কেন ভারতের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশ স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন জল সঙ্কটে পড়েছেন বা পড়তে চলেছেন?ভারতের অন্যতম প্রধান মহানগর চেন্নাইতে গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে জলের জন্য কার্যত হাহাকার চলছে।গরিব বস্তিবাসী থেকে শুরু করে বহুতল অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যবিত্ত, সকলকেই বেসরকারি ট্যাঙ্কার থেকে পানীয় জল কিনতে হচ্ছে চড়া দামে।

সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে আইটি করিডরের বাসিন্দা এক গৃহবধূ এক সংবাদ মাধ্যমে কে জানান , “তৃষ্ণা সবারই সমান – অথচ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের জলের প্রয়োজনের দিকে কোনো নজরই দিচ্ছেন না।”দিল্লির বহু জায়গায় জল সরবরাহ করতে হচ্ছে ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে “অনলাইনে ট্যাঙ্কার বুক করে নিতে বলা হচ্ছে অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দাদেরকে, সেটাও এক সপ্তাহের আগে কোনো ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।””এদিকে জল না-আসায় অসহনীয় হয়ে উঠছে রান্নাঘরে, বাথরুমে অবস্থাও ।”জলাভাবের কারণে শহরের বহু হোটেল তাদের গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের বলছে অফিসে না-এসে বাড়িতে থেকেই কাজ করতে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগ থেকে বলা হচ্ছে , আজ চেন্নাইয়ের যা অবস্থা তাতে করে আর মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই ভারতের অন্তত ২১টি বড় শহরও একই রকম ভাবে জলশূন্য হয়ে পড়তে পারে।নীতি আয়োগের ডেপুটি চেয়ারম্যান রাজীব কুমার জানান , “ইতিহাস খুব সম্ভবত এই প্রথমবার টানা ছ’বছর ধরে ভারতে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ।”

“সাধারণত দু’তিনবছর কম বৃষ্টি হলেও পরের বার তা পুষিয়ে যায়, কিন্তু একটানা এই অনাবৃষ্টির এই ঘটনা এক রকম নজিরবিহীন বলা চলে । তার ওপর ভারত মোট যে পরিমাণ বৃষ্টির জল পেয়ে থাকে, তার অর্ধেকটাই স্রেফ নষ্ট হয়ে যায়।”কিন্তু শুধু মৌসুমি বৃষ্টিপাত কম হওয়াটাই দেশে এই জল সঙ্কটের একমাত্র কারণ বলে কোনো ভাবে মনে করছেন না এশিয়া প্যাসিফিক ওয়াটার ফোরামের রবি নারায়ণন।তিনি বলেন , “ভারত যে পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করে থাকে – তা কিন্তু আমেরিকা ও চীনের মোট ব্যবহার্য পরিমাণের চেয়েও অনেকে বেশি।””এ থেকেই আন্দাজ করা যায় সমস্যাটা কততা গভীর ।””অথচ মাটির নিচের শিলাস্তরে কোথায় কতটা জল আছে, সেই অ্যাকুইফার বা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলোর কোনও নির্ভরযোগ্য মানচিত্রও নেই আমাদের কাছে ।”এই ওয়াটার সিকি‌উরিটি প্ল্যানটা তৈরি করাই আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত।”

জলসম্পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা ও লেখালেখি করছেন পরিবেশবিদ জয়া মিত্র।তিনিও এক সংবাদ মাধ্যম কে জানান , রেনওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের চিরাচরিত ও প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হারিয়ে ফেলাতেই ভারত আজ এই চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে ।তার কথায়, “বৃষ্টির জল হচ্ছে পৃথিবীর সব মিঠে জলের উৎস। অথচ আধুনিকীকরণের নাম করে আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি সেই বৃষ্টির জল সংরক্ষণের বহু প্রাচীন পন্থাগুলোকেই ।””অথচ দেখুন, ভারতের যেখানে সবচেয়ে কম বৃষ্টি পড়ে – বছরে মাত্র ১৩০ মিলিমিটার বা তারও কম – সেই পশ্চিম রাজস্থান কিন্তু জলের সংকটে ভোগে না। কারণ তারা প্রতিটা ফোঁটা বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে রাখতে জানে।” “মাটির তলায় গর্ত করে, ছাদের পুরো জলটা সেখানে জমা করে সারা বছর তারা ওই জল ব্যবহার করতে পারে।”কলকাতা বা গাঙ্গেয় অববাহিকায় হয়তো মাটির তলায় গর্ত করে জল জমা রাখা সম্ভব নয় – কিন্তু সেখানে যেটা সম্ভব তা হল পুকুর-দীঘি-জলাশয় খনন করা।জয়া মিত্র এগুলোরই নাম দিয়েছেন ‘মাটির গামলা’ বা ‘মাটির বাসন’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *