এখানকার শিবলিঙ্গের রয়েছে এক অলৌকিক মহিমা , দেবাদিদেব হাতেনাতে ফল দেন ভক্তরা আর্তি জানালে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : এই শিবলিঙ্গ অলৌকিকভাবে বড় আকারের গুটিবসন্তে ভরে যায়। হুগলির মহাবীরতলার বুড়ো মহাদেব ঠিক এতটাই জাগ্রত। দেবাদিদেব মহাদেবের দুটি শিবলিঙ্গের সহাবস্থান দেখা যায় হুগলি জেলার চণ্ডীতলা থানার গরলগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনের কাছে কৃষ্ণপুর মহাবীরতলায়। এর মধ্যে ছোট শিবলিঙ্গ মাটি থেকে উঠে এসেছে। আর, বড় শিবলিঙ্গটি কাশী থেকে আনা হয়েছে। গরলগাছা গ্রামের গাজন উৎসব কয়েকশো বছরের পুরনো। এখানকার শিবলিঙ্গ অত্যন্ত জাগ্রত। তার পিছনে রয়েছে এক লম্বা কাহিনি।

কৃষ্ণপুর গ্রামের পান পরিবার বংশ পরম্পরায় গাজনে মূল সন্ন্যাসীর দায়িত্ব পালন করেন। একবার গাজন উৎসবের ঠিক একমাস আগে মূল সন্ন্যাসী রামজীবন পান, প্রচণ্ড জ্বর ও সঙ্গে গুটি বসন্তে আক্রান্ত হন। আগেকার দিনে, বসন্ত হলে সেই পরিবার বা সংশ্লিষ্ট সবাই নিরামিষ খেতেন। নির্দিষ্ট কিছু সবজি বা শস্য আক্রান্ত ব্যক্তি, তাঁদের পরিবারের সদস্য বা তাঁদের ঘনিষ্ঠরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতেন না। পাশাপাশি, যতদিন না-রোগী সুস্থ হচ্ছেন, ততদিন দেবতার আরাধনাও ছিল নিষিদ্ধ।

সেই বছর মূল সন্ন্যাসীই যেহেতু বসন্ত রোগে আক্রান্ত, তাই গাজন উৎসব করাও সম্ভব ছিল না। তা নিয়ে গ্রামবাসীদের মন ছিল বিষণ্ণ। অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, তাহলে কি দেবাদিদেব রুষ্ট হয়েছেন? মূল গাজন সন্ন্যাসীও মহাদেবের কাছে সেরে ওঠার জন্য আকুতি জানান। উৎসব শুরুর যখন মাত্র আর তিন দিন বাকি, সেই সময় গ্রামের সবাই ধরে নেন যে এবছর আর গাজন উৎসব হবে না। এনিয়ে সেই সময়কার প্রথা অনুযায়ী গ্রামে ঢেঁড়া পিটিয়ে সেকথা জানানোও হয়ে গিয়েছিল।

এমন সময় মূল সন্ন্যাসী ভোররাতে স্বপ্নাদেশ পান। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশে দেবাদিদেব বলেছিলেন যে রামজীবন পানের মাথার কাছে নতুন গামছা, ধুতি, মাটির কলসি রাখা আছে। গঙ্গায় ডুব দিয়ে গঙ্গার জল নিয়ে গ্রামের মন্দিরের শিবলিঙ্গের কাছে রামজীবনকে আসতে হবে। সেবায়েতকে স্বপ্নাদেশ দেওয়াই আছে। রামজীবন পান মন্দিরে পৌঁছলেই সেবায়েত সব ব্যবস্থা করে দেবেন। ভক্ত রামজীবন তার উত্তরে বলেছিলেন, তিনি একমাস ধরে শয্যাশায়ী। তাঁর ওঠার-চলার শক্তি নেই। কথিত আছে, দেবাদিদেব নাকি তৎক্ষণাৎ রামজীবনের সেই কষ্ট দূর করে দেন। আর রামজীবনও শরীরে এক অপূর্ব শিহরণ উপলব্ধি করেন।

দেবাদিদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাউকে না-জানিয়ে নতুন ধুতি পরে, কোমরে গামছা বেঁধে, মাটির কলসি মাথায় নিয়ে ভক্ত রামজীবনও উত্তরপাড়া এলাকায় গঙ্গার দিকে রওনা দেন। এরমধ্যেই সকাল থেকে রামজীবনকে কোথাও দেখতে না-পেয়ে বাড়ির লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কারণ, রামজীবন সেই সময় কলাপাতায় শুয়ে থাকতেন। চলাফেরার শক্তি ছিল না। সর্বাঙ্গ ভরে গিয়েছিল গুটিবসন্তে। এই পরিস্থিতিতে হাজারো চেষ্টা করেও পানবাড়ি ও পাড়ার লোকজন রামজীবনের খোঁজ না-পেয়ে চিন্তায় পড়ে যান।

এমন সময় সবাই দেখতে পান যে মাথায় জলভরা মাটির কলসি নিয়ে ভিজে নতুন ধুতি পরে কোমরে গামছা বেঁধে গায়ে চন্দন মেখে রামজীবন মন্দিরের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দিরে উপস্থিত হয়েছিলেন সেবায়েতও। তিনি শিবলিঙ্গকে পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখতে পান, শিবলিঙ্গ বড় বড় গুটি বসন্তে ভরে গিয়েছে। সবার সঙ্গে তা দেখতে মন্দিরে পৌঁছে যান রামজীবন পানও। দেখা যায়, রামজীবন পানের গায়ে গুটিবসন্তের চিহ্নমাত্র নেই। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সকলে ভগবান শিবশংকরের নামে জয়ধ্বনি করে ওঠেন। সেই থেকে এখানকার শিবলিঙ্গে গুটিবসন্তের চিহ্ন দেখা যায়। আর এখানকার দেবাদিদেবের অপর নাম হয়ে ওঠে বসন্ত রায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *