প্রভু জগন্নাথ মাসির বাড়ি যান রথে চড়ে , কিন্তু কে এই মাসি? জানুন তাঁর মাহাত্ম্য সম্পর্কে

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ : জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা। রথে চড়ে তিন কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়ি যান তিন ভাই-বোন। কে তাঁদের মাসি? কেন বছরের সাতদিন মাসির বাড়িতে প্রভু জগন্নাথ ও তাঁর দুই ভাই-বোনকে আপ্যায়ন করা হয়?দেবী গুন্ডিচাই প্রভু জগন্নাথের মাসি :পুরীর রাজপথের দুই প্রান্তে অবস্থিত দুই মন্দির। সারা বছরই এখানে দর্শনার্থিদের ভিড় লেগে থাকে এই দুই মন্দিরে। এক প্রান্তে প্রভু জগন্নাথের শ্রীক্ষেত্র। অন্যদিকে রয়েছে গুন্ডিচা মন্দির। এই গুন্ডিচাই জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার মাসি বলে পরিচিত।

কেন গুন্ডিচা মন্দিরেই প্রভু বেড়াতে আসেন?

বেশ কিছু লোককাহিনি প্রচলিত রয়েছে। যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য ও তাঁর স্ত্রীর কথা। আসলে রাজার স্ত্রী-র নামই ছিল গুন্ডিচা। তাঁকে উদ্দেশ্য করেই এই মন্দির তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। কথিত আছে দেব বিশ্বকর্মা যখন বন্ধ ঘরে জগন্নাথ মূর্তি তৈরি করছিলেন, গুন্ডিচাদেবী কোনওভাবে তা দেখে ফেলেন। সেই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি দেখেই তিনি মোহিত হয়ে রাজাকে অনুরোধ করেন আরও একটি মন্দির নির্মানের জন্য। এমনটাও শোনা যায় যে, রাণী গুন্ডিচাই প্রথম রথযাত্রার প্রচলন করে বছরের নির্দিষ্ট সময় জগন্নাথের সেবার অবকাশ পেতে চান। তাঁর কথা মতোই তৈরি হয় গুন্ডিচা মন্দির।

তথ্যহীন অন্য একটি লোককথায় রয়েছে যে, প্রভু জগন্নাথ গুন্ডিচা দেবীর মন্দির দেখে প্রসন্ন হয়েছিলেন। তাই বছরের সাতদিন করে এখানে কাটিয়ে যাওয়ার কথা দিয়েছিলেন। সেই থেকে নাকি রথযাত্রা এবং প্রভুর গুন্ডিচা মন্দিরে সাতদিন কাটানোর প্রচলন হয়েছে।

এছাড়াও পুরীর গুন্ডিচা মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে বেশকিছু লোকশ্রুতি। অনেকেই মনে করেন, এই মন্দির আসলে স্থানীয় এক দেবীর। তাঁর নামই গুন্ডিচা। মনে করা হয়, তিনি দেবী দুর্গার রূপ। ওড়িয়া ভাষায় গুটিবসন্ত রোগকে ‘গুন্ডি’ বলা হয়। এই দেবী গুণ্ডিচা আসলে সেই রোগ নিরাময়ের দেবী। এঁকেই কৃষ্ণ-জগন্নাথের মাসি হিসেবে অভিহিত করা হয়।

মন্দিরটি চারদিকে সুদৃশ্য বাগান দিয়ে ঘেরা। অনেকেই তাই এই মন্দিরকে জগন্নাথের বাগানবাড়ি বলে থাকেন। হালকা ধূসর বেলেপাথরে তৈরি এই মন্দিরে কলিঙ্গ স্থাপত্য শৈলীর উৎকৃষ্ট নিদর্শন ধরা পড়ে। মন্দিরের চারটি অংশ। একেবারে অন্দরে গর্ভগৃহ, যেখানে রথের সময় প্রভু জগন্নাথ অবস্থান করেন। বাইরে সমাবেশ দালান ও নাটমন্দির। এছাড়া রয়েছে একটি ভোগমণ্ডপ। বাগান ঘেরা এই মন্দিরের চারপাশে উঁচু পাঁচিল চোখে পড়ে। এছাড়া মন্দিরে দুটি ফটক রয়েছে। পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত একটি বিশাল দরজা। এই দরজা দিয়েই জগন্নাথ মূর্তি রথে থেকে নামিয়ে গুন্ডিচা মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়। এর ঠিক উলটোদিকে আরও একটি দরজা রয়েছে। পূর্বদিকের ওই দরজা দিয়েই ত্রিমূর্তিকে পুনরায় রথে তোলা হয়

প্রভুর আরাধনায় আয়োজনের কী বন্দোবস্ত থাকে?

সাতদিন ধরে প্রভু জগন্নাথের জন্য একাধিক উৎসবের আয়োজন করা হয় গুন্ডিচা মন্দিরে। কথিত আছে, এই সাতদিন প্রভুর সঙ্গে দেবী লক্ষ্মী সরাসরি থাকেন না। তাই গুন্ডিচা মন্দিরে গোপীদের সঙ্গে লীলায় মত্ত হন জগন্নাথ। যার খেশারত অবশ্য শ্রীমন্দিরে ফেরার সময় দিতে হয় জগন্নাথকে। স্ত্রী লক্ষ্মীর মানভঞ্জন করতে রসোগোল্লা নিয়ে আসেন প্রভু জগন্নাথ। এমনই সব লোককথার ভিড়ে জগন্নাথ হয়ে উঠেছেন প্রাণের দেবতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *