বাবা রিক্সা চালক , এদিকে ছেলে আইএএস অফিসার! যেন সিনেমার গল্প এই জীবন সংগ্রাম

বাংলার খবর | বেস্ট কলকাতা নিউজ

বেস্ট কলকাতা নিউজ :পেটে খিদে নিয়ে রিক্সার প্যাডেলে পা। মুখে পাকা দাড়ি। বয়সও হয়েছে। কিন্তু হার মানেননি জীবন যুদ্ধে। ছেলেকে বানিয়েছেন আইএএস অফিসার। ছেলেও সোনার টুকরো। প্রথম প্রচেষ্টায় সফল, তাও আবার ইউপিএসসির মতো পরীক্ষায়। কম বড় কথা নয়। রিক্সাচালক বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন দেশের এই ছেলে। সফলতার পথ ছিল কাঁটায় ভর্তি। হাজারো চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ তিনি সফল। লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তবে ইচ্ছা আর পরিশ্রমের উপর ভর করে মানুষ কি না করতে পারে? তা দেখিয়ে দিয়েছেন গোবিন্দ জয়সওয়াল। রিক্সা চালক বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ছেলের জন্য তার বাবার স্ট্রাগলও হার মানাবে সিনেমার গল্পকে।

গোবিন্দ জয়সওয়ালের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। এই পদে আসতে তাকে কম যুদ্ধ জয় করতে হয়নি। পাশে ছিলেন তার পরিশ্রমী বাবা এবং বোনেরা। ছেলেকে বড় করতে বাবা নারায়ণ জয়সওয়াল কি না করেননি?পেটে খিদে নিয়ে দিনের পর দিন রিক্সা চালিয়েছেন। অবিচল থেকেছেন পিতৃ ধর্ম পালনে। অভাব অভিযোগকে পাত্তাই দেননি। লক্ষ্য শুধু ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করা। রক্ত জল করা পয়সায় ছেলের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। কখনো না খেয়ে ঘুমিয়েছেন, আবার কখনো বা জুটেছে এক টুকরো শুকনো রুটি। অথচ একটা সময় অভাব যে কি তা বুঝতেন না। ১৯৯৫ সালের আগে নারায়ণ জয়সওয়ালের প্রায় ৩৫টি রিক্সা ছিল, কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বদলে যায় সবকিছু। হঠাৎ স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার খরচ যোগাতে বিক্রি করে দেন ২০টি রিক্সা। কিন্তু স্ত্রীকে অর্থাৎ গোবিন্দর মাকে বাঁচাতে পারেননি। তখন গোবিন্দ ক্লাস সেভেনে পড়েন । মা মারা যাওয়ার পর বাবার সাথে চলে আসেন বারাণসীর আলিপুরার ছোট্ট একটা ঘরে। ২০০৫ সাল নাগাদ গোবিন্দ জয়সওয়াল বাবাকে জানান, তিনি ইউপিএসসি পড়তে দিল্লি যাবেন। অনেক টাকার দরকার। ছেলের প্রয়োজনে চুপ করে বসে থাকে থাকতে পারেননি। প্রত্যেকটা রিক্সা ছিল সন্তানের মত। তার মধ্যে ১৪ টা বিক্রি করে দেন। পড়ে থাকে মাত্র একটা। যেটা উনি নিজে চালান। রিক্সার মালিক থেকে হয়ে যান রিক্সা চালক।

গোবিন্দ বারাণসীর হরিশচন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক শেষ করার পর ২০০৬ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দিল্লিতে চলে যান। সেখানে কিন্তু কোনো কোচিং এ ভর্তি হননি, বরং বাচ্চাদের টিউশনি পড়াতেন। সেই টাকায় নিজের খরচ চালিয়েছেন। ২০০৭ সালে ইউপিএসসিতে ৪৮ তম স্থানে তার নাম আসে। প্রথম চেষ্টাতেই পান সফলতা। তাঁর স্ত্রী চন্দনা চৌধুরীও একজন আইপিএস অফিসার। প্রায় ১০ বছর আগে ছেলে গোবিন্দ নিজের উপার্জনের টাকায় বাবার জন্য একটা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। সেখানে এখন সুখের সংসার। এই সফলতার গল্প অনুপ্রেরণার, বহু মানুষের বেঁচে থাকার রসদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *